কিছু লোক কেন অন্যের চেয়ে তাড়াতাড়ি অসুস্থ হন তা বুঝতে আমাদের প্রথমে করোনভাইরাস দেহে কীভাবে সংক্রামিত হয় তা বুঝতে হবে ।
আপনি সম্ভবত জানেন যে, করোনাভাইরাস একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস। যখন কোনও সংক্রামিত ব্যক্তি কাশি, হাঁচি বা কোনও পৃষ্ঠকে স্পর্শ করে, তখন অন্য ব্যক্তি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে , এবং সেই পৃষ্ঠকে স্পর্শ করে মুখে,হাতে এবং নাকের মাধ্যমে এই ভাইরাস এ আক্রান্ত হতে পারে ।
আসুন, বুঝার চেষ্টা করি একবার নাক বা মুখে ভাইরাস ঢুকার পর আমাদের দেহে কিভাবে সংক্রামিত হয় ।
আপনার নাক বা মুখে একবার, ভাইরাসটি তখন আপনার শরীরের এমন কোষগুলিতে প্রবেশ করে যা ACE-2 নামে একটি প্রোটিন ; এই কোষগুলি গলার পিছনে গভীর এবং অনুনাসিক উত্তরণে উচ্চ পর্যন্ত অবস্থিত হতে পারে। “রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রিসেপটর যা ভাইরাসের পৃষ্ঠের কাটাগুলি (স্পাইকগুলি) আনলক করার উপায় খুঁজতে থাকে । একবার ভাইরাসটি “রিসেপটরটি আনলক” করে দিলে বাঁ ফুসফুসে ঢুকলে এটি কোষের ভিতরে প্রবেশ করে এবং সেই কোষের ভিতরে পুনরায় নিজে নিজে তৈরি করতে নিজের সংখ্যা বাড়াতে পারে । অনেক টা ডিম দেবার মত ।
এটি একবার তার অনেকগুলি অনুলিপি তৈরি করার পরে, নতুন ভাইরাসগুলি সেই কোষ থেকে বেরিয়ে আসে এবং আরও বেশি সংখ্যক কোষ সংক্রামিত হতে থাকে। পথে ভাইরাসটি সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথে শ্বাসনালীর নলগুলির আস্তরণে বাসা বাঁধে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং কাশি সৃষ্টি করে ।
কাশির মাধ্যমে মিউকাস(শ্লেষ্মা) বের হয়ে যায় এবং জ্বর ভাইরাসটির পথকে আস্তে আস্তে ধীর করে দেয়, প্রতিরূপকে ধীর করে তোলে।এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এটি ভাইরাসের সাথে লড়াই করার পরে এবং অনেকের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠে ।
ভাইরাসটি যখন শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুসে চলে আসে তখন এটি “ফুসফুসের টিস্যুগুলির কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে”, নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে । এজন্য এখন ডাক্তার রা এক্সরে করতে বলেন ।
ভাইরাস রোগীর এক্সরে
ভাইরাস রোগীর এক্সরে
ভাইরাসটি ফুসফুসে যাওয়ার সাথে সাথে মনে রাখবেন , যে আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা একদম উচ্চ গিয়ারে গিয়ে COVID-19 কে পরাশক্তি করার চেষ্টা করে ।
কখনও কখনও, প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাল হলে ব্যক্তির শরীরে তেমন কোনও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারেনা সহজেই সুস্থ হয়ে উঠেন । যাদের ইতোমধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অসুখ রয়েছে – যেমন ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, অটোইমিউন অসুস্থতা বা উচ্চ রক্তচাপ – তাদের মধ্যে এই ভাইরাস এ আক্রান্ত হয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারে ।
আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাল থাকে এমন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া , হাত ধোয়া, সোশাল ডিসটেন্স সহ সব মেনে চলার মাধ্যমেই আমরা এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে পারি । আর কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন খুলে যাবে । মনে রাখবেন লকডাউন খুলে যাওয়া মানেই ভাইরাসের বিপদ কেটে গেল তা একেবারেই নয় । বরং বিপদ আরো বেড়ে যাবে । দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করেই এই লকডাউন খুলে দিতে হচ্ছে ।
নিজে এবং নিজের পরিবারকে সুস্থ রাখতে চাইলে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন,মেডিসিন না আসা পর্যন্ত যেভাবে করে এখন সোশাল ডিসটেন্স,মাস্ক,হাত ধোয়ার মত বিষয় মেনে চলছেন তা পালন করতে থাকুন । সবাই ভাল থাকুন ।
লেখা;
সম্রাট বড়ুয়া , ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জেনিয়া ,ভার্জেনিয়া,আমেরিকা ।
তারিখঃ এপ্রিল ২৯ ,২০২০